২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে প্রবাসীকে নির্যাতন, গ্রেপ্তার এক
লিবিয়ায় ফেনীর সোনাগাজীর মোরশেদ আলম নামে এক প্রবাসীকে অপহরণ করে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপন আদায়ের ঘটনার মামলায় রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে আল আমিন ওরফে মিলন (২৭) নামে অপহরণ চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার গুলশানের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আল আমিন খুলনার লবনচরা থানার মহাম্মদিয়া পাড়ার আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
লিবিয়ায় অপহরনের শিকার মোরশেদ আলম উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা। বুধবার বিকেলে আল আমিনকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। সেখান অপহরণ চক্রের সদস্য আল আমিন লিবিয়ায় প্রবাসী মোরশেদ আলমকে অপহরণ করে নির্যাতন ও মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপর নেওয়ার কথা স্বীকার করে লিবিয়ায় তাদের চক্রের সদস্যদের নাম-ঠিকানাসহ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
এঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদি হয়ে গত ৮ জানুয়ারী (সোমবার) অজ্ঞাতনামাদেরকে আসামি করে প্রবাসে স্বামীকে অপহরণ করে মৃত্যুর ভয় দেখানোর ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপহরকারী চক্রের সদস্য আল আমিনকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার এজাহারে প্রবাসীর স্ত্রী জাহানারা বেগম উল্লেখ করেন, গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে লিবিবিয়া থেকে আলী নামে এক ইমু একাউন্ট থেকে ফোন করে তার (জাহানারা) স্বামী মোরশেদ আলম তাকে জানায়, অজ্ঞাতনামা লোকেরা তাকেসহ অন্তত ৫০-৬০জন লোককে অপহরণ করে একটি অন্ধকার কক্ষে নিয়ে বেধে রেখেছে। বিশ লাখ টাকা মুক্তিপন না দিলে তাকে মেরে ফেলবে। একইভাবে পরদিনও একই নম্বর থেকে জাহানারার মুঠোফোনে কল আসে। পরে উপায়ন্তু না পেয়ে জাহানারা বেগম ওই ইমু একাউন্ট থেকে পাঠানো একটি হিসেব নম্বরে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। এরপর তার স্বামী আবারও ফোন করে কমপক্ষে ৭ লাখ টাকা পাঠাতে বলে। অন্যথায় তাকে মুক্তির বদলে নির্যাতন করে মেরে ফেলবে। পরে চলতি মাসে ৪ তারিখে জাহানারা আবারও অপহরণকারীদের দেয়া আরেকটি হিসেব নম্বরে একলাখ টাকা পাঠান।
জাহানারা বেগম বলেন, দেড় লাখ টাকা দেয়ার পর গত ৮ জানুয়ারী সোমবার দুপুরে আবারও অপহরকারীদের নাম্বর থেকে ফোন করে মোরশেদ তাকে বলে, দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তাকে বেড়দক মারধর ও নির্যাতন করছে। পরে ঘটনাটি কয়েকজন আত্মীয় স্বজনকে জানালে তারা থানায় গিয়ে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণসহ পুলিশের পরামর্শ নিতে বলেন। পরে তিনি থানায় এসে ইমু নম্বর ও অপহরনকারীদের দেয়া টাকা পাঠানোর ডাচ বাংলা ব্যাংকের হিসেব নম্বর ও জমা রশিদ দিয়ে থানায় মামলা করেন।
সোনাগাজী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাহবুব আলম সরকার বলেন, মামলা দায়েরের পর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইমু নম্বর ও ব্যাংকে টাকা পাঠানো হিসেব নম্বরের মালিকদের শনাক্তে মাঠে নামেন। টাকা পাঠানো ডাচ বাংলা ব্যাংকের দুটি হিসেব নম্বরের লোকদের নাম-ঠিকানা ও হিসেব নম্বরে থাকা মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করা হলেও তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে গত সোমবার রাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে আল আমিনের অবস্থান নিশ্চিত হন। এরপর অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার গুলশান এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদ্বীপ রায় বলেন, গ্রেপ্তারের পর অপহরণ চক্রের সদস্য আল আমিন জিজ্ঞাসাবাদে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপর নেওয়ার কথা স্বীকার করে লিবিয়ায় তাদের চক্রের সদস্যদের নাম-ঠিকানাসহ চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। পরে তাকে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি গ্রহনের জন্য ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালতের নির্দেশে তাকে ফেনীর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন