সর্বজনীন পেনশন স্কিমঃ চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা, বাংলাদেশে বেসরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের আওতায় আনার এটাই প্রথম উদ্যোগ। যে বিপুল জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে আইনটি করা হয়েছে, সেটা বাস্তবায়িত হলে এটাই হবে দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক ফান্ড।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট কোটি। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন ১৪ লাখের কিছু বেশি।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা সর্বত্র কার্যকরীতা পেলে প্রায় আট কোটি ৩৫ লাখ মানুষ এ ব্যবস্থার আওতায় আসবে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমটি যেহেতু একটি দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিভিত্তিক প্রকল্প, তাই এখানে যারা নিবন্ধিত হবে, তাদের একটি বিশাল অংশই যে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করবে না; বরং বিভিন্ন ওজরে অনাগ্রহ বা অনীহায় একটা পর্যায়ে তা বন্ধ করে দেবে, এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আবার অনেক লোক এমনও থাকবে, যারা হয়তো চাঁদা প্রদান শুরু করেছে, কিন্তু মাঝে দিতে পারেনি। আবার সে দু-চার বছর পর দেওয়া শুরু করবে। তাদের বিষয়ে ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩’-এ কিছু নির্দেশনা পাওয়া যায়। সেটিতে যাওয়ার আগে একথা বলে রাখা প্রয়োজন যে, এ ধরনের স্কিমে এমন লোকের সংখ্যা বেশি পরিমাণে হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে, বীমা কোম্পানিগুলোর জীবন বীমা পলিসিকে। যেখানে বীমা কোম্পানির এজেন্টদের চাপাচাপি এবং তাদের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই বীমা পলিসি খরিদ করে থাকে। কিন্তু দু-চারটি প্রিমিয়াম দেওয়ার পর অথবা কেউ কয়েক বছর প্রিমিয়াম দেওয়ার পর তা আর চালু রাখে না। সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসা লোকদের একটি বড় অংশই যে এমন হবেন তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
এখন দেখা যাক, এমন লোকদের জন্য এই স্কিমে কী বিধান রাখা হয়েছে?
‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩’-এর ধারা ৫-এর উপধারা ৪-এ উল্লেখ রয়েছে
মাসিক চাঁদা প্রদানঃ
- নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করিতে ব্যর্থ হইলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা প্রদান করা যাইবে এবং এক মাস অতিবাহিত হইলে পরবর্তী প্রতি দিনের জন্য ১% হারে বিলম্ব ফি জমা প্রদান সাপেক্ষে হিসাবটি সচল রাখা যাইবে।
আর উপধারা ৫-এ বলা হয়েছে
- কোনো চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে ৩ (তিন) কিস্তি চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হইলে তাহার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হইবে এবং প্রতিদিনের জন্য উপ-বিধি (৪) অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হইবে না।
উপরে বর্ণিত দুটি উপধারা আবার পড়ে নিন। বিশেষত উপধারা ৫-এর দিকে আরেকবার নজর দিন। এবার ধারণা করি, একজন চাঁদাদাতা ১০ বছরের জন্য কোনো স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হল এবং ৯ বছর ধারাবাহিক চাঁদা দিয়ে গেল, এরপর আর দিতে পারল না। তাহলে তার ক্ষেত্রে কী ঘটবে?
ধারা ৫-এর উপধারা ৫ বলছে, সে যদি বকেয়া টাকা বিলম্ব ফিসহ আদায় না করে তাহলে তার হিসাবটি সচল করা হবে না। এখন একজন লোক যদি মাসিক ১০,০০০ টাকা করে ৯ বছর চাঁদা আদায় করে (১০০০০×১০৮) তাহলে বছরে ১,২০,০০০ টাকা হিসেবে ৯ বছরে জমা করেছে ১০,৮০,০০০ টাকা। এরপর আর্থিক দুর্গতি, শারীরিক অসুস্থতা অথবা হঠাৎ কোনো বিপদে পড়ে সে আর চাঁদা দিতে পারল না। আর তার নমিনি বা নিকটাত্মীয়ও আর্থিকভাবে এত সক্ষম নয় যে, তার চাঁদা আদায় করবে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র তার পাশে না দাঁড়িয়ে তার টাকা জব্দ করে তার মাথায় ছড়ি ঘুরাবে?
এটা কি কাবুলিওয়ালা, না জনগণের করে পরিচালিত হওয়া একটি প্রজাতন্ত্র?
এক বছরেরও কম সময়ে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে ৩০%-এর বেশি। আর স্বাধীনতার সময় তো ডলার ছিল ৭.৫ টাকা। ৮৭/৮৮ সন অর্থাৎ ৯০ দশকের শেষের দিকেও ছিল ৩০/৩৫ টাকার মধ্যে। এখন যা সরকারি হিসাবেই ১১৫ টাকার বেশি। এখান থেকে মুদ্রাস্ফীতির চিত্রটা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না।
এখন যার ১৮ বছর বয়স সে ৪২ বছর টাকা জমা করার পর যখন পেনশন পাবে তখন সে মুদ্রার মূল্য থাকবে কত? এমন তো নয় যে, তার জমাকৃত অর্থের ১০ গুণ তাকে প্রদান করা হল; কিন্তু বাজার শক্তির হিসেবে তার মূল্য কমে গেছে আগের থেকে বিশ গুণ। সেক্ষেত্রে লোকটি কি ১০ গুণ বেশি পেল নাকি ১০ গুণ কম পেল। কাগুজে মুদ্রা হয়তো পেয়ে গেছে বহু গুণ বেশি, কিন্তু সেটির মূল্যমান নেমে এসেছে আগের থেকে অর্ধেকে। বিষয়টিকে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়। তা হচ্ছে মূল্যস্ফীতির হিসাব। বৈদেশিক মুদ্রার সাথে টাকার বিনিময় হারের তুলনা না করলেও যদি আমরা ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনা করি, তাহলে দেখতে পাব, যতই দিন যাচ্ছে কাগুজে নোট তার ক্রয়শক্তি হারাচ্ছে। মুরব্বিদের থেকে শোনা ইতিহাসে নজর দেওয়া লাগবে না; বরং ৩০/৪০ বছর বয়স হয়ে যাওয়া যেকোনো ব্যক্তিই তার আগের ১০/২০ বছরের নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য এবং বর্তমান বাজারমূল্য তুলনা করলেই আকাশ-পাতালের ফারাক স্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন। কয়েক গুণ বেতন বেড়ে যাওয়ার পরও হালালভাবে চলতে যাওয়া লোকদের মাসিক খরচাদি নির্বাহে প্রায় হিমশিম খেতে হয়।
এখন তো বছরে বছরেই প্রায় স্বীকৃতভাবেই ১০/১২% মূল্যস্ফীতি হয়ে থাকে। যদিও অভিজ্ঞ মহলের মতে, বাস্তবে তার পরিমণ আরো অনেক বেশি। তো যদি ১০/১২%-ও ধরে নেওয়া হয়, তাহলে এখনকার টাকা দিয়ে যা কেনা যাচ্ছে, প্রতি বছর ১০/১২% মূল্যস্ফীতির পর ১০/১৫/২০ বছর পর এবং আরও বাড়িয়ে বললে ৪২ বছর পর কি তা কেনা যাবে?! তখন যদি ২০/২৫ গুণ বাড়িয়েও টাকা দেওয়া হয়, সেটি কি এখনকার ক্রয়ক্ষমতার সমান হবে? বোঝা যাচ্ছে যে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বাহ্যিক বিচারেও নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়নি।
মুদ্রাস্ফীতির হিসাব ছাড়াই এই স্কিম ঘোষনা হয়েছে বলে আমার ধারনা, আর যদি হিসাব হয়েও থাকে সেটা আমাদের ক্লিয়ার করা হয়নি। ডলারের বিপরীতে গত কয়েক দশকে টাকার মুল্য কি হারে কমেছে, সেটার কোন হিসাব করা হয়েছে বলেও মনে হয়নি।
সবথেকে বড় কারন হল, মানুষের ব্যাংকের উপর আস্থা নেই, আস্থা নেই বীমাতেও, আমরা দেখেছি কিভাবে লুটেরা ব্যাংকগুলো লুট করে খেয়েছে, দেখেছি বীমার মেয়াদ শেষ হলেও বীমা কোম্পানীগুলো গ্রাহকের বীমার টাকা বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করছে, দিচ্ছেই না অনেক ক্ষেত্রে, যেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেখভাল করার দায়িত্বও সরকারের। তাহলে মানুষ কেন এবং কোন ভরষায় ৪২ বছর পর্যন্ত সরকারের ফান্ডে টাকা রাখবে??
তবে হ্যা, সরকার বলছে পেনশন স্কিমে গ্রাহকের টাকা সরকারী ভাবে গ্যারান্টেড! আরে ভাই, সরকারের উপরেই তো মানুষের আস্থা নাই, ব্যাংকের রিজার্ভ তলানিতে, মাথাপিছু ঋনের হার দিন দিন বেড়েই চলছে, কমার কোনো সম্ভাবনা নাই, সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনিয়ম দুর্নীতির ২/১ একটা ঘটনা মাঝে মাঝে সামনে আসছে, তাতেই যেই হাল! সেখানে কিভাবে জনগন সরকারে আস্থা রাখবে? তাছাড়া গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন থেকে এটাও পরিস্কার যে, সরকারও জনগনের মনোনীত নয়, তাহলে ফলাফল কি? সর্বক্ষেত্রে জনস্বার্থের তোয়াক্কা না করেই ক্ষমতাসীনদের স্বেচ্ছাচারিতাই জাহিল হবে। উদাহরনস্বরুপ, আমরা দেখেছি কিভাবে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে দেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। অথবা যদি বলি বর্তমানে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রাক্কালে, একটি ডামি আপিল সাজিয়ে কিভাবে আদালতের মাধ্যমে সরকারী চাকুরিতে কোটা ব্যবস্থার পুনর্বহাল করা হয়েছিল।
কিন্তু কেন?? তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলিকরনে জনস্বার্থের কোনো বালাই ছিল?? মোটেও না, বরং ফখরুদ্দিন সরকারের উপরেই এখন পর্যন্ত সর্বচ্চো জনস্বার্থ নিশ্চিত হয়েছিল, সেই সরকার দেখিয়ে দিয়েছিল যে, দেশদ্রোহী, লুটেদেরও শেষ আছে।
যাইহোক, এটা আলোচনার বিষয় নয়, কথা হল ভবিষ্যতে কখনো কোনো সরকার যদি মনে করে যে এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা একটা লস প্রজেক্ট, বহাল রাখার কার্যত কোন প্রয়োজন নেই, তাহলে জনগনের জমাকৃত এই টাকার কি হবে, এই একটা বড় প্রশ্ন থেকেই যায়।
এখন অনেকে বলছেন, শুধুমাত্র শিক্ষকদের আপত্তি কেন??
এই ধারনাটাই আমি মানতে নারাজ, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় শুধুমাত্র শিক্ষকরাই আপত্তি করেনি, বরং বাংলাদেশের আপামর জনগন এটা প্রত্যাখ্যান করেছে, কিভাবে??
শিক্ষকদের আন্দোলন প্রকাশ্যে কারন তারা না চাইলেও এই পেনশন তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু, এতো বড় একটা অফার, সত্যিকার ভাবে চিন্তা করলে, এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম অবশ্যই সবার জন্য একটা বড় অপরচুনিটি, তারপরেও আপামর জনগন এটাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, তাহলে বোঝা যাচ্ছে এটা অবশ্যই জনগনের প্রত্যাখ্যিত!
আরেকটা বড় কারন হলো, এই পেনশন স্কিমটা চালু করার আগে আমি মনে করি কর্তৃপক্ষের আরো বেশি পড়াশনা করার দরকার ছিল। কারন এতো বড় ভলিউমের জনসংখ্যার একটা দেশে, এতো বড় ভলিউমের মাথাপিছু ঋনের দেশে জনগনের টাকার উৎসের কথা বিবেচনায় না রেখেই এই স্কিমের আইন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ধরুন, আমি এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতের চাকরি করি, আগামী মাসে আমি চাকুরি হারালাম এবং আগামী দুইবছর আমি বেকার থাকলাম, তাহলে আমি পেনশন চালু রাখবো কিভাবে, বা আমি আমার পেনশন স্কিম বন্ধ করতে চাই, এবং বন্ধ করলে আমি আমার টাকা ফেরত পাবো কিনা এবং পুনরায় নতুন করে আমি যদি স্কিম চালু করতে চাই তাহলে সেটা সম্ভব কিনা, সেটার কোন ব্যাখ্যা এই আইনে নেই।
আর স্কিম বন্ধ রেখে পুনঃচালু করার জন্য যেই বিলম্ব ফি রাখা হয়েছে ওটা আসলে অজপাড়াগায় প্রচলিত সুদখোরদের উচ্চহারে সুদের পরিফলন অথবা ডাকাতি, কেন?? একটা উদাহরন দেই।
ধারা ৫-এর উপধারা ৪-এ বলা আছে, নির্ধারিত তারিখের এক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১% হারে বিলম্ব ফি জমাপ্রদান সাপেক্ষে হিসাবটি সচল রাখা যাবে। এক দিনে ১% তাহলে ৩০ দিনে ৩০%। বছরে ৩৬৫%। অর্থাৎ ১০,০০০ টাকার ৪টি কিস্তি যদি কারো বাকি থাকে এবং সে যদি তার হিসাবটি সচল করতে যায় তাহলে ৯০ দিন বিলম্বের জন্য তাকে দৈনিক ১% করে ২৭,০০০ টাকা বিলম্ব ফিসহ মোট ৩০,০০০+২৭,০০০=৫৭,০০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর এক বছর বিলম্বের কথা চিন্তা করলে মাথা ঘুরে যায়? তবুও একবার দেখে নেওয়া যাক। ধরে নেওয়া যাক, কারো এক লক্ষ টাকা বকেয়া পড়েছে। বকেয়া পড়ার এক বছর পর সে তার হিসাবটি সচল করতে গিয়েছে। তাকে কত বিলম্ব ফি দিতে হবে? ‘জাতীয় পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩,-এর ধারা-৫-এর উপধারা ৪ বলছে, তাকে দৈনিক ১% হারে বিলম্ব ফি দিতে হবে। অর্থাৎ ১,০০,০০০×১% ×৩৬৫=৩,৬৫,০০০। মূল টাকা ১,০০,০০০ আর বিলম্ব ফি ৩,৬৫,০০০ অর্থাৎ মোট ৪৬৫০০০ টাকা দিয়ে সে তার হিসাবটি সচল করতে পারবেন। এ হিসাব যারা একটু খেয়াল করে দেখবেন, তাদের হয়তো সন্দেহ হবে যে, পেনশন স্কিমের এ বিধিমালা যারা বসিয়েছেন তাদের ওপর মারওয়ারি বা কাবুলিওয়ালা বা এদেশের একশ্রেণির রক্তচোষা এনজিও ও সুদখোরদের প্রেতাত্মা ভর করেছিল হয়তো?
এবার আসি ম্যাচুরিটি নিয়ে, বলা হচ্ছে পেনশনার ৬০ বছর বয়স থেকে আজিবন পেনশন পাবেন, যদিও এই আইনটি করেছেন আরাম আয়েশে দিন পার করা সরকারী কর্মকর্তারা, যাদের ৬০ বা ৭০ বছর বয়সে পেনশন চালু হলেও মাশাআল্লাহ আরো অনেক বছর পেনশন ভোগ করার একটা যৌলশ থাকে, কিন্তু প্রাইভেট চাকুরিজীবিদের কথা চিন্তা করলে এই পেনশনের ম্যাচুরিটির মেয়াদ অন্তত ৫ বছর কমিয়ে ৫৫ থেকে শুরু করা উচিত। যাইহোক, আসল কথা হলো, পেনশনার পাবেন আজীবন সুবিধা, অন্যদিকে বলা হচ্ছে নমিনি পাবেন পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পার হওয়া পর্যন্ত, অর্থাৎ পেনশনার যদি ৭৪ বছরে ইন্তেকাল করেন তাহলে পরবর্তী ১ বছর পরে তার নমিনির পেনশনের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে?? কেন এই ৭৫ এর হিসাব, কেন আপনাদের এই ৭৫ সংখ্যাটির উপর এতো ভালবাসা হলো?? এটা অত্যন্য অমানবিক।
আর সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে ইসলামী চিন্তাধারা থেকে। কারন, এদেশের সিংহভাগ মানুষ মুসলিম এবং তাদের অনেকেই একান্ত বাধ্য না হলে সুদ থেকে বেঁচে থাকতে চায়। নিজের শেষ জীবনে এসে সুদ এবং শরীয়া নিষিদ্ধ কারবার থেকে অর্থ কামাবে এবং সে অর্থ দিয়ে শেষ জীবন চলবে এটা তারা চায় না। এ কারণেও অনেকেই এতে যোগ দেবে না। আর শরয়ী বিশ্লেষণ করলে ইসলামের ওপর জীবনযাপন করে এমন মুসলমানের জন্য ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম, ২০২৩’-এ যোগ দেওয়ার সুযোগ আসলেও নেই, এমনটাই পরিষ্কার ভাবে জানিয়েছেন দেশের খ্যাতিমান আলেমগন।
তবে এই সুযোগটা তৈরি করার সুযোগও সরকারের কাছে ছিল। কিভাবে???
দেশের খ্যাতিমান আলেমগনের সাথে পরামর্শ করে এই প্রজেক্ট লাইভ করা দরকার ছিল।
আমার জানামতে, সরকার এই প্রোগ্রাম লাইভ করার আগেই দেশের ওলামায়ে কেরামগন সরকারের কাছে একটা রুপরেখা দিয়েছিল, কিভাবে এই প্রোগ্রামটা ইসলামিক শরিয়াহ মেনে করা যায়, কিন্তু সরকার আমলে নেয়নি।
সরকারের এখনো সুযোগ আছে, দেশের খ্যাতিমান আলেমগনের সাথে কথা বলে এই সর্বজনীন পেনশন স্কিমটা পুরোপুরি ইসলামীক সিস্টেমে করার। অথবা, দেশের বৃহত মুসলীম জনগোষ্ঠীর জন্য ইসলামিক সিস্টেম চালু রেখে অন্যদের জন্য ভিন্ন স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারী করা।
মোট কথা, সরকারের এই উদ্যোগে নিঃসন্দেহে ত্রুটি রয়েছে, তা পরিমার্জন-পরিবর্ধন যেমন দরকার; তেমনি তৃণমূল পর্যায়ের সব সেক্টরের কর্মক্ষম মানুষকে উপকৃত করার এই মেগা প্রজেক্টকে সাধুবাদ প্রদানও আমাদের একান্ত জরুরি।
লেখকঃ সাজিদুর রহমান, পে-রোল বিশেষজ্ঞ
[মতামত কলামে প্রকাশিত লেখা সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। মুক্ত চিন্তাকে সম্মান জানাতে মতামত কলামের লেখা সম্পাদনা করা হয় না। ফলে লেখার মূল থিম স্বদেশ বাংলার আদর্শের সাথে নাও মিলতে পারে। এর দায় সম্পূর্ণ লেখকের।
আপনার মতামত লিখুন