খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

হাত খরচের টাকায় উদ্যোক্তা ইয়াসমিন পোশাক রপ্তানিতে আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা

মোঃ মাসুদ হোসেন:
প্রকাশিত: শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪, ৯:৩৩ অপরাহ্ণ
হাত খরচের টাকায় উদ্যোক্তা ইয়াসমিন পোশাক রপ্তানিতে আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা
মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরোতেই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু অদম্য মানসিকতা যাঁর, তিনি এখানেই থেমে যাবেন, তা কি হয়! সংসার-সন্তান সামলে চুকিয়েছেন পড়াশোনার পাটও। চাকরি নয়, ব্যবসা করবেন, স্বাবলম্বী হবেন। তাই স্বামীর দেয়া হাতখরচের টাকা জমিয়ে স্বল্পপুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও বেড়েছে কলেবর।
তাঁর সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার নানা চড়াই-উতরাইয়ের গল্প লিখেছেন মোঃ মাসুদ হোসেন। ইয়াসমিন সুলতানা, পরিবারের ৬ ভাই-বোনের মধ্যে পঞ্চম সন্তান। জন্ম-বেড়ে উঠা চাঁদপুর জেলাতে।
২০০৯ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহতলী জিলানী চিশতি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন তিনি। শৈশব ও পড়াশোনা চাঁদপুরে হলেও স্বামীর চাকরিসূত্রে ঢাকার সাভারে তার বসবাস। বর্তমানে স্বামী-সংসার সামলে দেশীয় পণ্যের একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা ইয়াসমিন। ফেসবুক পেজ ‘সঞ্চয়িতা’ ঘিরেই এখন তার স্বপ্ন। সম্প্রতি ইয়াসমিন সুলতানা তার উদ্যোগের গল্প বলেছেন স্বদেশ বাংলাকে।
শুধু মনের জোর আর সদ্বিচ্ছার কারণে একজন শূন্য থেকে শুরু করে নিজের চেষ্টা, অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে কীভাবে নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করা যায় তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অদম্য সংগ্রামী নারী ইয়াসমিন। আজ তিনি সফল একজন নারী উদ্যোক্তা। এই পথটা সহজ ছিল না। অনেক কঠিন পরিক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। সেই গল্প জানতে যেতে হবে আরো অনেক পেছেনে। ইয়াসমিনের শৈশব ও কৈশোরের স্বর্ণালী দিনগুলো কাটে চাঁদপুরেই।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়ালেখা করেন সেখান থেকে। স্কুল- কলেজ জীবন, সব কিছুই ছিল রঙিন। কলেজ ক্যাম্পাস, পড়ালেখা, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়া, মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়ানো, সব কিছুই চলছিল স্বাভাবিক নিয়মে। হঠাৎ করেই বদলে গেলো তার জীবনের দৃশ্যপট। তখনও সবেমাত্র পড়ছিলেন উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষে। পারিবারিকভাবে হঠাৎ করে তাকে দেয়া হয় বিয়ে। পরে যেতে হয় শ্বশুর বাড়িতে। শুরু হয় নতুন জীবন। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় বিয়ের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে পাশ করেন এইচএসসি। এর পরেই জন্ম দেন একটি কন্যা সন্তান।
বিয়ের পর সব কিছু তার কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। নিজের পড়ালেখার স্বপ্ন, স্বামী-সংসার, সন্তানের সেবাযত্ন কিভাবে কি করবেন তা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়ে যান ইয়াসমিন। এক বছর বিরতি দিয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে আরো দুঃচিন্তায় পরে যান তিনি।
পড়ালেখা করে চাকরি পাওয়া যেন সোনার হরিণ। পেলেও স্বামী-সংসার ও মেয়েকে সামাল দেয়ার কেউ থাকবে না। এমনটা ভেবেই অন্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চিন্তা মাথায় আসে তার। স্বামীর দেয়া হাত খরচের সামান্য কিছু টাকা জমিয়ে শুরু করেন দেশীয় পণ্যের অনলাইন ব্যবসা।
শুরুতেই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার বিখ্যাত মোমবাটিক পোশাক নিয়ে ২০১৯ সালে কাজ শুরু করেন এই নারী উদ্যোক্তা। কিন্তু এর মধ্যে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও চলে আসে মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। তাই কোভিড চলে আসায় সব কাজ থমকে যায় ইয়াসমিনের।
২০২০ সালে ঘরবন্দি অবস্থায় ৩ মাসের সন্তান নিয়েও সাহস করে ‘সঞ্চয়িতা’ নামে ফেইসবুক পেজ খুলে চালিয়ে যান তার এই ই-কমার্স ব্যবসা।
তিনি জানান, বাটিক নিয়ে একটা সময় আমার ধারণা ছিলো কমদামী সস্তা পোশাক। কিন্তু না একটা ভালো মানের বাটিক ব্যবহারের পর আমার সেই ভুল ভাঙ্গে। তখনি মাথায় আসে অন্যদের যেই ভুল ধারণা সেটাকে বদলাতে হবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এই পণ্যকে নতুন করে পরিচিত করাতে হবে সবার কাছে। সেই চিন্তা থেকেই ধীরেধীরে এগিয়ে চলা।
বাটিক শুনলেই কমদামি মনে করে নাক সিটকান এমন অনেকের পড়নেও আরামদায়ক বাটিক। আমার প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়িতার ট্যাগ লাইন হচ্ছে “কোয়ালিটি ফার্স্ট” আর সেটার সাথে কখনোই আপোষ করিনি। তাই নিত্য নতুন ক্রেতার সাথে সাথে অসংখ্য রিপিট ক্রেতাও পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ। দীর্ঘ ৪ বছরের ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি। তবে শুরু থেকেই আমার স্বামী ছায়ার মতো পাশে ছিল। যেকোনো সমস্যায় সে-ই সাহস জোগাত। সময়-সুযোগ করে নানা কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
জানা যায়, বাহারি ডিজাইনের মেয়েদের থ্রি-পিস, ওয়ান পিস, ওড়না, হাতের কাজ করা শাড়ি, ব্লাউজ, বেডশিট তার সঞ্চয়িতা পেজ থেকে লাইভে এসে প্রদর্শনী শুরু করেন। ওই লাইভ সম্প্রচারে দেশ- বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের তিনি দেশীয় পণ্যের ব্যাপারে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন।
ক্রেতারা তার লাইভ দেখে নিজের পছন্দমতো পোশাকটি অর্ডার করতে শুরু করেন। প্রতি লাইভে অর্ডার করা পণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্রেতাদের কাছে ডেলিভারিতে পৌঁছানোর যাবতীয় কাজও ইয়াসমিন স্বামীর সহযোগিতায় করে থাকেন। নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত অনলাইন ও অফলাইনের প্রশিক্ষণ নেয়া এই উদ্যোক্তা ২০২৩ সালে  ইউএনডিপি ও আনন্দমেলার অধীনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আইসিটি গ্র‍্যান্ড ৫০ হাজার টাকার পুরষ্কার গ্রহণ করেন। যা একজন নারী উদ্যোক্তার উন্নয়নের জন্য সরকারের এই ভূমিকা সত্যিই অনস্বীকার্য।
তিনি জানান, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ও অফলাইন প্রশিক্ষণে যুক্ত করে নিজেকে দক্ষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি শুরু থেকেই। বর্তমানে সঞ্চয়িতার পুরো কার্যক্রম অনলাইনে চললেও স্বপ্ন দেখি একদিন এই উদ্যোগ অফলাইনেও প্রকাশ পাবে। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাজের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হচ্ছে আমার স্বামী।
সে আমাকে সাপোর্ট না করলে আজ আমার যাত্রা এতোদূর এগিয়ে আসতো না। তিনি আরো বলেন, মাত্র ৩৫০০ টাকায় শুরু করা বিজনেস টাকে ৪ বছরে যেটুকু এনেছি তার জন্য এখনো কোন ঋণ করতে হয়নি। আমার এই বিজনেসে প্রায় লাখ টাকার পুঁজি রয়েছে এখন। নিজের সাধ্যের মধ্যে থেকে করেছি। যেহেতু বিজনেস টা অনলাইন ভিত্তিক তাই নারী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে একটু হ্যারেস হতে হয়। নারীদের যেই সম্মানের জায়গাটা সেটা আমাদের সমাজে এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, সারাবছর চাহিদা সম্পন্ন বাটিকে এখন অনেক নতুনত্ব এসেছে, যা মুগ্ধ করে সবাইকে। গুণে এবং মান ধরে রাখতে পারলে এই পণ্যের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনেক। দেশের বাইরে প্রবাসী বাঙালির কাছে অনেক চাহিদা থাকলেও কুরিয়ার জটিলতায় তা সবসময় পৌছানো সম্ভব হয় না। তারপরও সঞ্চয়িতার পণ্য একটা সময় দেশের ৬৪ জেলায় পৌঁছাতে থাকলেও বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সহ ইউরোপ আমেরিকার ১৬ টি দেশে এখন পর্যন্ত পৌঁছেছে সঞ্চয়িতার মোমবাটিক। যা একজন নারীর হাত ধরে আসা রেমিট্যান্স সত্যিই আনন্দদায়ক।

খেলাপি ঋণের চাপে চরম বিপদে ১০ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭:১৬ অপরাহ্ণ
খেলাপি ঋণের চাপে চরম বিপদে ১০ ব্যাংক

‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই রিপোর্টের তথ্যানুযায়ী দেশে খেলাপি ঋণের ৭০ শতাংশই ১০টি ব্যাংকে। তিন মাস আগেও যা ছিল ৫১ শতাংশের মত। তবে এসব ব্যাংকের নাম প্রকাশ করা হয়নি প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের এই খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। এই ব্যাংকগুলোর শীর্ষ ঋণগ্রহীতারা খেলাপি হলেই ২৯টি ব্যাংক তাদের ন্যূনতম মূলধন সক্ষমতা বা ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেটস রেশিও (সিআরএআর) বজায় রাখতে ব্যর্থ হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জুন প্রান্তিকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, শীর্ষ পাঁচ ও ১০ ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণের ঘনত্ব আগের (মার্চ) প্রান্তিকের তুলনায় যথাক্রমে ২.৮৯ ও ২.৭৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। ২০২৪ সালের জুন শেষে, খেলাপি ঋণের ৫৪ শতাংশই ছিল শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীর্ষ পাঁচ ও ১০টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের এই ক্রমবর্ধমান কেন্দ্রীকরণ সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের জন্য উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন প্রান্তিকে মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে খারাপ ও মন্দ (ব্যাড অ্যান্ড লস) ঋণের হিস্যা কিছুটা কমলেও এখনও এই শ্রেণির ঋণ সবচেয়ে বেশি।

মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে খারাপ ও মন্দ ঋণ ৭৯.৪২ শতাংশ, সাব-স্ট্যান্ডার্ড’ (নিম্নমান) ঋণ অংশ ১৭.৩৯ শতাংশ এবং ‘ডাউটফুল’ (সন্দেহজনক) ঋণে ৩.১৯ শতাংশ। খারাপ ও মন্দ শ্রেণির ঋণ সবচেয়ে বাজে ধরনের খেলাপি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের জুন শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২.১১ লাখ কোটি টাকা, যা মোট বকেয়া ঋণের ১২.৫৬ শতাংশ। তবে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৮৫ লাখ কোটি টাকা, যা দেশের মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। ওই সময়ে মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬.৮৩ লাখ কোটি টাকা।

শীর্ষ সংবাদ:
খেলাপি ঋণের চাপে চরম বিপদে ১০ ব্যাংক লেনদেনের শীর্ষে সায়হাম কটন মিলস লিমিটেড দরবৃদ্ধির শীর্ষে সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড দরপতনের শীর্ষে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পাকিস্তান থেকে আলু-পেঁয়াজ কিনতে চায় সরকার, চিন্তায় ভারত সিরিয়ার বিমানবন্দরের কাছে পৌঁছে গেছে ইসরায়েল দুদকে চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার নিয়োগ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হচ্ছেন ড. মোমেন! বিভিন্ন প্রকল্পে দেয়া ৮ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা ফেরত নিচ্ছে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মায়ানমারের মংডু দখল করেছে আরাকান আর্মি জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল শুনানী আজ ৭৯ জেলে-নাবিকসহ বাংলাদেশি ২ জাহাজ নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার ব্যাংক হিসাব তলব দর বৃদ্ধির কারণ জানে না মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ইউসিবি থেকে ২০০০ কোটি টাকা সরিয়েছেন ‘আদনান ইমাম’ সোনার ভরি এক লাখ ৩৮ হাজার ৩৩৯ টাকা নাগরিকদের ভোটার হওয়ার অনুরোধ ইসির বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থনির্ভর সম্পর্ক চায় ভারতঃ বিক্রম মি‌শ্রি দরপতনের শীর্ষে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড লেনদেনের শীর্ষে ড্রাগন সোয়েটার এন্ড স্পিনিং মিলস লিমিটেড