একদিনে ৫ জেলার সড়কে ঝড়ল ১৫ প্রাণ
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ৫ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে সাতজন, বগুড়ায় তিনজন, জামালপুরে দুইজন, মৌলভীবাজারে দুইজন ও ফরিদপুরে একজন নিহত হয়েছেন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহে বাসচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সাত যাত্রী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদীয়া ইউনিয়নের চরবড়বিলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদর মধ্যে চারজনের পরিচয় মিলেছে। যাদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের সদস্য। নিহতরা হলেন- ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রামভদ্রপুরের আশাবট গ্রামের বাবলু আহমেদ (৪৫), তার স্ত্রী শিলা আক্তার (৩৫), তাদের ছেলে মো. সাদমান (৭) এবং একই উপজেলার অটোরিকশা চালক আলামিন সরকার (২৫)।
একটি বাসের সামনে পড়ে যায়। এ সময় বাসচাপায় অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে অটোরিকশায় থাকা স্বামী-স্ত্রী ও সাত বছরের ছেলেসহ সাত যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ থাকায় সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে, তবে চালক পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।
বগুড়া
বগুড়ার শাজাহানপুরে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক ও হেলপারসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের বীরগ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নাটোর সদর উপজেলার আল আমিন (৩৯), কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কুদ্দুস মিয়া (৩৭) ও উলিপুর উপজেলার নূর ইসলাম (২২)। এদের মধ্যে আল আমিন ও কুদ্দুস দুই ট্রাকের চালক। আর নুর ইসলাম হেলপার।
শাজাহানপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, বালুবাহী একটি ট্রাক নাটোরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় বীরগ্রামে পৌঁছালে নাটোরের দিক থেকে আসা কুড়িগ্রামগামী একটি কয়লাবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ট্রাকের চালক ও এক হেলপার নিহত হন।
জামালপুর
জামালপুরে ক্রিকেট খেলে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর কাচারিপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হচ্ছে- শাহবাজপুর কাচারিপাড়া এলাকার সোহেল রানার ছেলে মো. কাঁকন মিয়া (১৬), এবং শারিফপুর ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটি ঠিকাদার বাড়ি এলাকার মো. সুমন মিয়ার ছেলে সিনহাদ (১৬)। তারা দুইজনেই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দুই বন্ধু মিলে ক্রিকেট খেলে। খেলা শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিল তারা। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই কাকনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় লোকজন সিনহাদকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ময়নাবাজার এলাকায় দুই সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও তিনজন। শুক্রবার বিকেলে মহাশস্ত্র গ্ৰামের ময়নাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- অটোরিকশাচালক রাজু মিয়া (২১) ও যাত্রী নাঈম মিয়া (২৯)। তাদের বাড়ি রাজনগর উপজেলায়।
রাজনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালেক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুই সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ফরিদপুর
ফরিদপুরের নগরকান্দায় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে রবিউল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। পরে দমকল বাহিনীর একটি দল এসে আগুন নেভায়।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের মাশাউজান এলাকায় ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় একলাছ উদ্দিন শেখ ওরফে সুমন (৩০) নামের আরেক মোটরসাইকেল আরোহী আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত রবিউল ইসলাম ফরিদপুর সদর উপজেলার কেশবনগর গ্রামের কলম শেখের ছেলে। আহত একলাছও একই গ্রামের বাসিন্দা।
নগরকান্দা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলাম জানান, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি শত শত জনতা মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে মহাসড়কটি অবরোধ করে রেখেছে। আমরা মরদেহ উদ্ধার করতে গেলে জনতা বাধা দেয়। তাদের দাবি মৃতের স্বজন না আসা পর্যন্ত মরদেহ ধরা যাবে না। মরদেহটি সড়কের মাঝে পড়ে ছিল। পরে জনতাকে বুঝিয়ে এবং হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পরে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আপনার মতামত লিখুন